একনজরে মুক্তা চাষের খুঁটিনাটি তথ্য

★ ঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। এ দেশে ঝিনুক চাষের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। ঝিনুক থেকে পাওয়া যায় মহামূল্যবান বস্তু ‘মুক্তা’। বিশ্বব্যাপী অমূল্য রত্নরাজির ক্ষেত্রে হীরার পরই মুক্তার স্থান। যা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়।
★ প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায় মোলাস্কা পর্বের (অখন্ড দেহ ম্যান্টল দ্বারা আবৃত) কয়েকটি প্রাণীর দেহ নিঃসৃত পদার্থ জমাট বেঁধে যে পদার্থ সৃষ্টি হয় তাই ‘মুক্তা’ নামে পরিচিত। আর এ সৃজন কর্মটি সম্পন্ন হয় ঝিনুকের দেহ অভ্যন্তরে। সেজন্য মুক্তার চাষ দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করতে পারে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
★ বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি ও পানি ঝিনুকে মুক্তা জন্মানোর জন্য যথেষ্ট অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে মুক্তা উৎপাদনের জন্য ঝিনুক চাষ তেমন ব্যাপকতা লাভ করেনি। অথচ বর্তমানে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে মুক্তার চাষ।
★ বাংলাদেশের নোনা পানিতে ৩০০ প্রজাতির এবং মিঠা পানিতে ২৭ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ৫ ধরনের ঝিনুকে মুক্তা হয়।
★ বাংলাদেশে এক পরিসংখ্যানে জনা যায় যে, প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করলে এই মূল্যবান সম্পদ হতে বছরে ১৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া ২০-৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
★ এশিয়ার বিভিন্ন মুক্তা চাষ গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায় যে ১ হেক্টর খামারে মাছের সাথে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে ৩ বছর চাষ চলাকালীন সময়ে ২০ লাখ টাকা আয় করা যায়।
★ মুক্তা চাষকে সেমি কালচার বলে।
★ আমাদের দেশে দুই ধরনের মুক্তা যথা- ‘গোলাপি’ ও ‘চুর’ মুক্তার মধ্যে গোলাপি মুক্তাই উন্নতমানের এবং এর কদর বেশি। অমূল্য রত্ন হিসেবে বিশ্বব্যাপী রয়েছে এর খ্যাতি।
আর চুর মুক্তা আয়ুর্বেদীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে এ মুক্তার জনপ্রিয়তা।
★ প্রকৃতিগতভাবে ঝিনুকে মুক্তার চাষ করতে হলে মিঠা পানির ভালো প্রজাতির ‘লেমিলিডেন্স মারজিনালিস’ নামক লম্বাটে ফোলা বা একটু মোটা ধরনের ঝিনুক সবচেয়ে ভালো। তবে মিঠা পানির ঝিনুকেই নয়, সামুদ্রিক ঝিনুকেও মুক্তা চাষ করা যেতে পারে।
★ বাংলাদেশও প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা উৎপাদনে সফল হয়েছে। এই সাফল্যকে বাণিজ্যিকভাবে বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম মুক্তা গবেষণাগার। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) স্থাপিত এ গবেষণাগার মুক্তা উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
★ বিএফআরআই
★ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝিনুক ও শামুক জাতীয় অমেরুদণ্ডী জলজপ্রাণী থেকে তৈরি হয় মুক্তা। মূল্য নির্ধারিত হয় আকার, আকৃতি ও রঙ দেখে। ইতিমধ্যে দেশীয় ঝিনুকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের গবেষকরা। তারা বলছেন, উদ্ভাবিত এ মুক্তা ওষুধশিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। হৃদরোগ ও চোখের অসুখে এটা কাজে লাগে।
মুক্তা সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক। মুক্তা অলংকারে শোভিত অতি মূল্যবান রত্ন। মুক্তার প্রধান ব্যবহার অলংকার হলেও কিছু কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় এবং ঔষধ তৈরিতে মুক্তা ও মুক্তাচূর্ণ ব্যবহার হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস নানা ধরণের অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদি তৈরি এবং ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস-যা হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের সব জায়গায় কম-বেশি মিঠাপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।
★ বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক মুক্তার আবাসস্থল। ★ বাংলাদেশের মহেশখালী ছিল ‘পিংক পার্ল’ বা গোলাপী মুক্তার জন্য জগদ্বিখ্যাত।
★ বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়। এসব জলাশয় মুক্তা বহনকারী ঝিনুকে পরিপূর্ণ। তবে গুণগত উৎকর্ষতা সম্পন্ন গোলাপী মুক্তা বৃহত্তর ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামে বেশি পাওয়া যায়।
দেশের পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা ও জলাশয়ে মাছের সাথে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে প্রতি একরে ৪০লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা।
★ কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকে পাঁচ মাসে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে একই আকারের মুক্তা উৎপাদন করতে সময় লেগেছিল দেড় থেকে দুই বছর। স্বল্পসময়ে ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুক্তা বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একই সাথে এতে ২০ থেকে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে
★ ঝিনুকে মেন্টাল টিস্যু ঢুকিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয় এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। এতে পাঁচ মাসেই ঝিনুকে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা জন্মে, যা ‘রাইস পার্ল’ নামে পরিচিত।
★ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বছরব্যাপী চাষ করা হলে মুক্তার আকার আরো বড় করা সম্ভব হবে। গ্রামীণ যেকোনো পরিবেশে বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় পুকুরে মাছের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে মুক্তা চাষ করা সম্ভব বলে প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান।
★ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরামূল্য ৫০ টাকা। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা যায়। এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া যায়, যার বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব ।
★ আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তার চাহিদা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা উলে¬খযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মুক্তা উৎপাদনের জন্য চাষকৃত ঝিনুক ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলাশয়ের পরিবেশ উন্নত করে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে দেশে মুক্তাচাষে বিরাট সফলতা অর্জন করা সম্ভব-যা দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
★ পত্রিকায় বেরিয়েছিল একর প্রতি ৪০ লাখ কিন্তু আমরা ট্রেনিং শেষ করার পর হিসেব করে দেখেছি সঠিক উপায়ে চাষ করলে আর মুক্তার বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী
★ অনেকের কাছেই মুক্তা বিক্রিয় বিষয়টি ঘোলাটে। আসলে বাংলাদেশে যেসকল মুক্তা হয়, সেগুলোর খুব কমই জেম কোয়ালিটির মুক্তা। সুতরাং রাইস পার্লগুলো কসমেটিক্স কোম্পানী, ঔষধ কোম্পানীতে অনায়াসেই বিক্রি সম্বব। আর জেম কোয়ালিটিরগুলো বড় বড় অর্নামেন্ট শো-রুমগুলোতে বিক্রি সম্ভব। এক্সপোর্ট করার কথা আপাতত চিন্তা না করাই উত্তম। কারন আমরা এখনও জাপান, চায়না বা ভারতের মত জেম কোয়ালিটির ভালো মুক্তা উৎপাদনে সফল হইনি ।
★ বিএফআরআইর বিজ্ঞানীরা জানান, গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী জরিপ চালিয়ে এ পর্যন্ত স্বাদু পানির ৫ ধরনের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা তৈরি হয়। ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৫ মিলিমিটার এবং গড়ে ৩ মিলিমিটার আকারে মুক্তা তৈরি হয়। এর আগে এই আকারের মুক্তা তৈরিতে সময় লেগেছিল ১২ থেকে ১৮ মাস। এ পর্যন্ত কমলা, গোলাপি, সাদা, ছাই_ এই ৪টি রঙের এবং তিন আকারের (গোল, রাইস, আঁকাবাঁকা) মুক্তা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ৮ মাসে পূর্ণাঙ্গ ইমেজ মুক্তা (চ্যাপ্টা আকৃতি) তৈরিতে সফলতা এসেছে। মুক্তা উৎপাদনকারী অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৭৬% এবং মুক্তা তৈরির হার ৮২%।
★ মুক্তা বিজ্ঞানী ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, মুক্তা চাষ গবেষণা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এরই মধ্যে ‘ইমেজ মুক্তা’ (চ্যাপ্টা আকৃতি) উৎপাদনে তারা সফল হয়েছেন। ইমেজ মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি তুলনামূলক সহজ এবং বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব। কিন্তু দেশীয় ঝিনুকের আকার ছোট হওয়ায় বড় ও সুন্দর আকৃতির মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মুক্তা চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য বিশ্বের মুক্তা উৎপাদনকারী দেশসমূহ থেকে উন্নত প্রজাতির ঝিনুক আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন মোহসেনা বেগম। `
★ বাংলার নদী-নালা, খাল-বিলে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক ঝিনুক থেকে আহরিত মুক্তা বিশেষ করে পিঙ্ক পার্ল ছিল অত্যন্ত দামী ও ভুবনবিখ্যাত।
★ এবার সুবিস্তৃত সমুদ্র উপকূলে লোনা পানিতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ঝিনুকের আবাসস্থল থেকে মুক্তা সংগ্রহের লক্ষ্যে বাণিজ্যিকভাবে লোনা পানির ঝিনুক চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারের চাঁদখালী নদীর মোহনা থেকে সেন্টমার্টিন, অন্যদিকে কুয়াকাটা, পায়রা, পটুয়াখালী পর্যন্ত সুবিস্তৃত সাগর উপকূলে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঝিনুক রয়েছে। দেশে ১৪২ প্রজাতির লোনা পানির ঝিনুক রয়েছে। মিঠা পানির রয়েছে ছয়টি প্রজাতি। এগুলোর মধ্যে অন্তত পাঁচটি প্রজাতির ঝিনুকে মুক্তার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
★ ইমেজ মুক্তা গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু বলেন, দেশে মুক্তা উৎপাদনে সক্ষম ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে দুটি প্রজাতি অধিকতর উপযোগী। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের জন্য প্রাথমিকভাবে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করে ভিতর চ্যাপ্টা আকৃতির মোম, প্লাস্টিক বা স্টিলের বস্তুর প্রতিচ্ছবি স্থাপন করে ঝিনুকটি পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা পাওয়া যায়। এভাবে সফলতার হার প্রায় ৮০ শতাংশ।
★ ইমেজ মুক্তার সম্ভাবনার বিষয়ে ইনস্টিটিউটটির পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের উপযোগী। মাছের সঙ্গে ঝিনুক চাষ করলে কোন খরচ ছাড়াই মৎস্য চাষীরা মুক্তা উৎপাদন করে অধিক আয় করতে পারবে।
★ মুক্তা প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে যথা (১) প্রাকৃতিক (২) কৃত্রিম ও (৩) প্রণোদিত উপায়ে উত্পাদিত মুক্তা। ঝিনুকের মধ্যে প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশে যে মুক্তা জন্মে তাকে প্রাকৃতিক মুক্তা বলে। যান্ত্রিক উপায়ে মাছের নির্যাস থেকে যে মুক্তা তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম মুক্তা বলে, যা অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল মুক্তা হিসাবে চালিয়ে দেয়। আবার কোনো বহিরাগত বস্তু যেমন কাঁচের টুকরো, হাড়ের গুঁড়ো অসম আকৃতির মুক্তার কণা কিংবা পুঁটি মাছের চোখের শুকনো লেন্স ঝিনুকের দেহের বিশেষ অঙ্গে (প্রধানত বীজ কোষাবাস) প্রবেশ করিয়ে যে মুক্তা তৈরি করা হয় তাকে প্রণোদিত উপায়ে তৈরি মুক্তা বলে।
★ ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা মিঠাপানির ঝিনুকে ব্যাপক সংখ্যক ইমেজ মুক্তা উত্পাদনে সফলতা অর্জন করেছে। ইমেজ মুক্তা এমন এক ধরনের মুক্তা যা সচরাচর দেখা যায় গোল মুক্তা থেকে আলাদা। এগুলো সাধারণত চ্যাপ্টা আকৃতির। ঝিনুকের ভেতরে কোনো কিছু নকশা বিশেষ পদ্ধতিতে স্থাপন করলে ধীরে ধীরে সে নকশাটি ধারণ করে মুক্তায়। বিজ্ঞানীরা জানান, ইমেজ ঝিনুকে স্থাপন করার জন্য সাধারণত বড় আকৃতির ও চ্যাপ্টা আকৃতির ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে মোম, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি দিয়ে কোনো কিছুর নকশা (প্রতিচ্ছবি) তৈরি করে তা ঝিনুকের দেহের অভ্যন্তরে ম্যান্টাল টিস্যুর নিচে স্থাপন করা হয়। একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১৫টি মেন্টাল টিস্যু প্রবেশ করানো হয়। ফলে ১০ থেকে ১২টি পর্যন্ত মুক্তা পাওয়া যায়। টিস্যুর চারপাশে ন্যাকার সিক্রেশন অর্থাত্ এক ধরনের লালা নিঃসরণ হয়। ক্রমাগত নিঃসৃত এ লালা জমাট বেঁধে মুক্তায় পরিণত হয়। এ স্তরটি যতটা পুরু হয় মুক্তার আকারও তত বড় হয়। অপারেশনের পরে ঝিনুক পুকুর বা জলাশয়ে ছেড়ে দিলে ৭-৮ মাস পর যে নকশাটি ঝিনুকের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছিল তার উপর প্রলেপ পড়ে হুবহু সেই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উত্পাদিত হয়। এভাবে ইমেজ মুক্তায় বিভিন্ন নাম, পাখি, মাছ, নৌকা, অলংকার, কোর্ট পিন, সো পিসসহ নানা ধরনের দৃষ্টিনন্দন প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হচ্ছে। যা নারীদের পোশাক পরিচ্ছদ সৌন্দর্য বর্ধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আবার গৃহ সজ্জায়ও ইমেজ মুক্তার কদর পৃথিবী জুড়ে রয়েছে।
★ আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল, যেমন- কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, চিড়িংগা, পটুয়াখালীতে সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। ঝিনুকের মূল্যবান ও আকর্ষণীয় সামগ্রীর মধ্যে লাইটশেড, ঝাড়বাতি, পর্দা, চাবির রিং, টেবিল ল্যাম্প, ঝাড়, ফুল, অ্যাশট্রে, কানের দুল, মালা, হাতের চুড়ি, চুলের ক্লিপসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল, পশু-পাখির মূর্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ঝিনুকের এসব সামগ্রীর কদর দিন দিন বাড়ছে। ঝিনুকের তৈরি নিত্যনতুন ডিজাইনের সামগ্রী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঝিনুক সামগ্রীর চাহিদাও রয়েছে। আজকাল শুধু ঝিনুকের সামগ্রীই নয় ঝিনুকের মাংসেরও যথেষ্ট চাহিদা ও কদর রয়েছে। ঝিনুক থেকে পান খাওয়ার চুন তৈরি করা হয়। ঝিনুকের গুঁড়া মৎস্য ও পোলট্রি ফার্মে খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশে ঝিনুক একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হয়েছে।
★ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায় এটা আমরা সবাই জানি; কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় এই মুক্তা? আসলে সব ধরনের ঝিনুকে কিন্তু মুক্তা তৈরি হয় না। পার্ল অয়েস্টার নামের বিশেষ ধরনের ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায়। যখন কোনো বালুকণা বা এমন ছোট কোনো উপাদান ঝিনুকের খোলে ঢুকে পড়ে, তখন ঝিনুক নেকর বা শুক্তিপুট (মাদার অব পার্ল নামে পরিচিত) নামের এক ধরনের পদার্থ দিয়ে ওটা ঢেকে ফেলে। কয়েক বছরের মধ্যে এর ওপরের একটার পর একটা আবরণ পড়ে।আর এভাবেই তৈরি হয় মুক্তা। মুক্তার প্রকৃতি, রং আর আকার নির্ভর করে শুক্তিপুটের রং আর মূল উপাদানের গঠনের ওপর। এখন অবশ্য কৃত্রিম মুক্তাও পাওয়া যায়; কিন্তু ওগুলো থেকে প্রাকৃতিক মুক্তা অনেক দামি। খামারে ঝিনুক চাষও করা হয় মুক্তার জন্য।
★ সব ঝিনুকে কিন্তু মুক্তা মেলে না। আবার সব মুক্তাই মূল্যবান নয়। ১৯৩৪ সালে ফিলিপাইনে পাওয়া গিয়েছিল মস্ত এক মুক্তা। ৭ কেজি ওজনের সেই মুক্তার দাম ধরা হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার। এর বহু পরে, ২০০৬ সাল নাগাদ সেই ফিলিপাইনেই আরেকটা বিরাট মুক্তা পাওয়া যায়। প্রায় ৩৭ কেজি ওজনের এই মুক্তার দাম ধরা হয়েছিল প্রায় দশ কোটি মার্কিন ডলার।
গিনেস বুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ যাবত্ পাওয়া যাওয়া সবচেয়ে বড় ঝিনুকটি হলো প্যাসিফিক অয়েস্টার বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতের ঝিনুক। ওটার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় চৌদ্দ ইঞ্চি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ডেনমার্কে এটি পাওয়া যায়।
★ অনেকে মনে করতে পারে যে ঝিনুক থেকে মুক্তা নিয়ে নিলে ঝিনুক বুঝি মারা যায়। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। মুক্তাচাষিরা খুব সাবধানে বিশেষ ছুরির সাহায্যে মুক্তা তুলে নেয়, এতে ওই ঝিনুক মারা পড়ে না এবং পরেও আবার মুক্তা উত্পাদন করতে পারে। হাজার হাজার বছর আগ থেকেই মানুষ সাগর থেকে মুক্তার জন্য ঝিনুক সংগ্রহ করছে। হান রাজবংশের আমলে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঝিনুক সংগ্রহ করা হতো।
পারস্য উপসাগর, মেক্সিকো উপকূল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার আশপাশের সাগর থেকে প্রচুর প্রাকৃতিক মুক্তা পাওয়া যায়। সাগরে ডুব দিয়ে ঝিনুক সংগ্রহ করার কাজটা মোটেই সহজ নয়। আগে স্রেফ দম বন্ধ করে পানিতে ডুবে ঝিনুক খুঁজতে হতো। আধুনিক জমানায় ডুবুরিরা নানা আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। তবে জাপানে আমা ডুবুরিরা এখনো পর্যটকদের
আকৃষ্ট করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া ঝিনুক সংগ্রহের কাজ করে থাকে।
পানিতে ডুব দিয়ে ঝিনুক বা মুক্তা সংগ্রহ করা চাট্টিখানি কথা নয়।
★ দিনে একটা ঝিনুক ৫০ গ্যালন পানি পরিষ্কার করে; কিন্তু কিভাবে করে? একটা ঝিনুক খাবারের খোঁজে প্রচুর পরিমাণ পানিকে এর শরীরের ভেতর দিয়ে পাম্প করে। প্লাংকটনসহ বিভিন্ন খুদে কণা এসময় ঝিনুকের শরীরের এক ধরনের আঠালো পদার্থে আটকে যায়। নিজের প্রয়োজনেই এগুলো খেয়ে ফেলে ঝিনুকরা; কিন্তু একই সঙ্গে পানি থেকে অতিরিক্ত শৈবাল, ক্ষতিকর কণা দূর করে সাগরের অন্যান্য প্রাণীর জন্য ভালো অবস্থায় রাখে জলের পরিবেশ।
খাদ্য হিসেবেও ঝিনুক বড্ড সুস্বাদু। জিংক, ফ্যাটি এসিডসহ নানা খনিজে পরিপূর্ণ। ভিটামিন ‘এ’ আর ‘বি’-ও আছে ঝিনুকের মাংসে। এটি প্রাচীন রোম ও মিসরে ছিল খুব জনপ্রিয় খাবার। এখন তো বিভিন্ন দেশের রেস্তোরাঁয়ই ঝিনুকের ম্যানু পাওয়া যায় ।
★ মুক্তা হলো একমাত্র রত্ন, যা জীবিত কোনো প্রাণী তৈরি করে।
★ মুক্তা যে ধরনের ঝিনুকে পাওয়া যায়, তারা পুরুষ হিসেবে জন্ম নিলেও তিন বছর বয়সের মধ্যে মেয়েতে রূপান্তরিত হয়।
★ এখন মিঠা পানিতেও মুক্তার জন্য ঝিনুক চাষ হয়। তবে এ ধরনের মুক্তা লবণাক্ত পানিতে উত্পাদিত মুক্তা থেকে অনেক কম মূল্যবান। এ ধরনের মুক্তা উত্পাদনে সবচেয়ে এগিয়ে চীনারা।
★ এখন বাজারে যেসব মুক্তা পাওয়া যায়, তার ৯৯ ভাগই কৃত্রিম বা চাষ করা
★ এদেশে শীতকালের স্থায়িত্ব কম বরং প্রায় সারা বছর উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। এ পরিবেশ ঝিনুকের দৈহিক বৃদ্ধি ও মুক্তা চাষের অনুকূল। এছাড়া, এদেশের ঝিনুক থেকে সংগ্রহ করা মুক্তার রং যথেষ্ট উজ্জ্বল। যা বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত জলাশয়। যেখানে একই সঙ্গে মাছ ও ঝিনুকের চাষ সম্ভব। রয়েছে শ্রমশক্তি।

★ ঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। এ দেশে ঝিনুক চাষের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। ঝিনুক থেকে পাওয়া যায় মহামূল্যবান বস্তু ‘মুক্তা’। বিশ্বব্যাপী অমূল্য রত্নরাজির ক্ষেত্রে হীরার পরই মুক্তার স্থান। যা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়।
★ প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষায় মোলাস্কা পর্বের (অখন্ড দেহ ম্যান্টল দ্বারা আবৃত) কয়েকটি প্রাণীর দেহ নিঃসৃত পদার্থ জমাট বেঁধে যে পদার্থ সৃষ্টি হয় তাই ‘মুক্তা’ নামে পরিচিত। আর এ সৃজন কর্মটি সম্পন্ন হয় ঝিনুকের দেহ অভ্যন্তরে। সেজন্য মুক্তার চাষ দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করতে পারে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
★ বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি ও পানি ঝিনুকে মুক্তা জন্মানোর জন্য যথেষ্ট অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে মুক্তা উৎপাদনের জন্য ঝিনুক চাষ তেমন ব্যাপকতা লাভ করেনি। অথচ বর্তমানে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে মুক্তার চাষ।
★ বাংলাদেশের নোনা পানিতে ৩০০ প্রজাতির এবং মিঠা পানিতে ২৭ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ৫ ধরনের ঝিনুকে মুক্তা হয়।
★ বাংলাদেশে এক পরিসংখ্যানে জনা যায় যে, প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা চাষের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করলে এই মূল্যবান সম্পদ হতে বছরে ১৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া ২০-৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
★ এশিয়ার বিভিন্ন মুক্তা চাষ গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায় যে ১ হেক্টর খামারে মাছের সাথে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে ৩ বছর চাষ চলাকালীন সময়ে ২০ লাখ টাকা আয় করা যায়।
★ মুক্তা চাষকে সেমি কালচার বলে।
★ আমাদের দেশে দুই ধরনের মুক্তা যথা- ‘গোলাপি’ ও ‘চুর’ মুক্তার মধ্যে গোলাপি মুক্তাই উন্নতমানের এবং এর কদর বেশি। অমূল্য রত্ন হিসেবে বিশ্বব্যাপী রয়েছে এর খ্যাতি।
আর চুর মুক্তা আয়ুর্বেদীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে এ মুক্তার জনপ্রিয়তা।
★ প্রকৃতিগতভাবে ঝিনুকে মুক্তার চাষ করতে হলে মিঠা পানির ভালো প্রজাতির ‘লেমিলিডেন্স মারজিনালিস’ নামক লম্বাটে ফোলা বা একটু মোটা ধরনের ঝিনুক সবচেয়ে ভালো। তবে মিঠা পানির ঝিনুকেই নয়, সামুদ্রিক ঝিনুকেও মুক্তা চাষ করা যেতে পারে।
★ বাংলাদেশও প্রণোদিত উপায়ে মুক্তা উৎপাদনে সফল হয়েছে। এই সাফল্যকে বাণিজ্যিকভাবে বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম মুক্তা গবেষণাগার। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) স্থাপিত এ গবেষণাগার মুক্তা উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
★ বিএফআরআই
★ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝিনুক ও শামুক জাতীয় অমেরুদণ্ডী জলজপ্রাণী থেকে তৈরি হয় মুক্তা। মূল্য নির্ধারিত হয় আকার, আকৃতি ও রঙ দেখে। ইতিমধ্যে দেশীয় ঝিনুকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের গবেষকরা। তারা বলছেন, উদ্ভাবিত এ মুক্তা ওষুধশিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। হৃদরোগ ও চোখের অসুখে এটা কাজে লাগে।
মুক্তা সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক। মুক্তা অলংকারে শোভিত অতি মূল্যবান রত্ন। মুক্তার প্রধান ব্যবহার অলংকার হলেও কিছু কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় এবং ঔষধ তৈরিতে মুক্তা ও মুক্তাচূর্ণ ব্যবহার হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস নানা ধরণের অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদি তৈরি এবং ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস-যা হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের সব জায়গায় কম-বেশি মিঠাপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।
★ বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক মুক্তার আবাসস্থল। ★ বাংলাদেশের মহেশখালী ছিল ‘পিংক পার্ল’ বা গোলাপী মুক্তার জন্য জগদ্বিখ্যাত।
★ বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়। এসব জলাশয় মুক্তা বহনকারী ঝিনুকে পরিপূর্ণ। তবে গুণগত উৎকর্ষতা সম্পন্ন গোলাপী মুক্তা বৃহত্তর ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, ফরিদপুর ও চট্টগ্রামে বেশি পাওয়া যায়।
দেশের পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা ও জলাশয়ে মাছের সাথে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে প্রতি একরে ৪০লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা।
★ কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকে পাঁচ মাসে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে একই আকারের মুক্তা উৎপাদন করতে সময় লেগেছিল দেড় থেকে দুই বছর। স্বল্পসময়ে ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুক্তা বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একই সাথে এতে ২০ থেকে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে
★ ঝিনুকে মেন্টাল টিস্যু ঢুকিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয় এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। এতে পাঁচ মাসেই ঝিনুকে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা জন্মে, যা ‘রাইস পার্ল’ নামে পরিচিত।
★ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বছরব্যাপী চাষ করা হলে মুক্তার আকার আরো বড় করা সম্ভব হবে। গ্রামীণ যেকোনো পরিবেশে বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় পুকুরে মাছের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে মুক্তা চাষ করা সম্ভব বলে প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান।
★ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরামূল্য ৫০ টাকা। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা যায়। এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া যায়, যার বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব ।
★ আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তার চাহিদা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা উলে¬খযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মুক্তা উৎপাদনের জন্য চাষকৃত ঝিনুক ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলাশয়ের পরিবেশ উন্নত করে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে দেশে মুক্তাচাষে বিরাট সফলতা অর্জন করা সম্ভব-যা দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
★ পত্রিকায় বেরিয়েছিল একর প্রতি ৪০ লাখ কিন্তু আমরা ট্রেনিং শেষ করার পর হিসেব করে দেখেছি সঠিক উপায়ে চাষ করলে আর মুক্তার বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী
★ অনেকের কাছেই মুক্তা বিক্রিয় বিষয়টি ঘোলাটে। আসলে বাংলাদেশে যেসকল মুক্তা হয়, সেগুলোর খুব কমই জেম কোয়ালিটির মুক্তা। সুতরাং রাইস পার্লগুলো কসমেটিক্স কোম্পানী, ঔষধ কোম্পানীতে অনায়াসেই বিক্রি সম্বব। আর জেম কোয়ালিটিরগুলো বড় বড় অর্নামেন্ট শো-রুমগুলোতে বিক্রি সম্ভব। এক্সপোর্ট করার কথা আপাতত চিন্তা না করাই উত্তম। কারন আমরা এখনও জাপান, চায়না বা ভারতের মত জেম কোয়ালিটির ভালো মুক্তা উৎপাদনে সফল হইনি ।
★ বিএফআরআইর বিজ্ঞানীরা জানান, গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী জরিপ চালিয়ে এ পর্যন্ত স্বাদু পানির ৫ ধরনের মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি ঝিনুক থেকে সর্বোচ্চ ১২টি মুক্তা তৈরি হয়। ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৫ মিলিমিটার এবং গড়ে ৩ মিলিমিটার আকারে মুক্তা তৈরি হয়। এর আগে এই আকারের মুক্তা তৈরিতে সময় লেগেছিল ১২ থেকে ১৮ মাস। এ পর্যন্ত কমলা, গোলাপি, সাদা, ছাই_ এই ৪টি রঙের এবং তিন আকারের (গোল, রাইস, আঁকাবাঁকা) মুক্তা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ৮ মাসে পূর্ণাঙ্গ ইমেজ মুক্তা (চ্যাপ্টা আকৃতি) তৈরিতে সফলতা এসেছে। মুক্তা উৎপাদনকারী অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৭৬% এবং মুক্তা তৈরির হার ৮২%।
★ মুক্তা বিজ্ঞানী ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, মুক্তা চাষ গবেষণা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এরই মধ্যে ‘ইমেজ মুক্তা’ (চ্যাপ্টা আকৃতি) উৎপাদনে তারা সফল হয়েছেন। ইমেজ মুক্তা উৎপাদন প্রযুক্তি তুলনামূলক সহজ এবং বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব। কিন্তু দেশীয় ঝিনুকের আকার ছোট হওয়ায় বড় ও সুন্দর আকৃতির মুক্তা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মুক্তা চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য বিশ্বের মুক্তা উৎপাদনকারী দেশসমূহ থেকে উন্নত প্রজাতির ঝিনুক আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন মোহসেনা বেগম। `
★ বাংলার নদী-নালা, খাল-বিলে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক ঝিনুক থেকে আহরিত মুক্তা বিশেষ করে পিঙ্ক পার্ল ছিল অত্যন্ত দামী ও ভুবনবিখ্যাত।
★ এবার সুবিস্তৃত সমুদ্র উপকূলে লোনা পানিতে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ঝিনুকের আবাসস্থল থেকে মুক্তা সংগ্রহের লক্ষ্যে বাণিজ্যিকভাবে লোনা পানির ঝিনুক চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারের চাঁদখালী নদীর মোহনা থেকে সেন্টমার্টিন, অন্যদিকে কুয়াকাটা, পায়রা, পটুয়াখালী পর্যন্ত সুবিস্তৃত সাগর উপকূলে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঝিনুক রয়েছে। দেশে ১৪২ প্রজাতির লোনা পানির ঝিনুক রয়েছে। মিঠা পানির রয়েছে ছয়টি প্রজাতি। এগুলোর মধ্যে অন্তত পাঁচটি প্রজাতির ঝিনুকে মুক্তার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
★ ইমেজ মুক্তা গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু বলেন, দেশে মুক্তা উৎপাদনে সক্ষম ৫ প্রজাতির মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে দুটি প্রজাতি অধিকতর উপযোগী। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের জন্য প্রাথমিকভাবে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করে ভিতর চ্যাপ্টা আকৃতির মোম, প্লাস্টিক বা স্টিলের বস্তুর প্রতিচ্ছবি স্থাপন করে ঝিনুকটি পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা পাওয়া যায়। এভাবে সফলতার হার প্রায় ৮০ শতাংশ।
★ ইমেজ মুক্তার সম্ভাবনার বিষয়ে ইনস্টিটিউটটির পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের উপযোগী। মাছের সঙ্গে ঝিনুক চাষ করলে কোন খরচ ছাড়াই মৎস্য চাষীরা মুক্তা উৎপাদন করে অধিক আয় করতে পারবে।
★ মুক্তা প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে যথা (১) প্রাকৃতিক (২) কৃত্রিম ও (৩) প্রণোদিত উপায়ে উত্পাদিত মুক্তা। ঝিনুকের মধ্যে প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশে যে মুক্তা জন্মে তাকে প্রাকৃতিক মুক্তা বলে। যান্ত্রিক উপায়ে মাছের নির্যাস থেকে যে মুক্তা তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম মুক্তা বলে, যা অসাধু ব্যবসায়ীরা আসল মুক্তা হিসাবে চালিয়ে দেয়। আবার কোনো বহিরাগত বস্তু যেমন কাঁচের টুকরো, হাড়ের গুঁড়ো অসম আকৃতির মুক্তার কণা কিংবা পুঁটি মাছের চোখের শুকনো লেন্স ঝিনুকের দেহের বিশেষ অঙ্গে (প্রধানত বীজ কোষাবাস) প্রবেশ করিয়ে যে মুক্তা তৈরি করা হয় তাকে প্রণোদিত উপায়ে তৈরি মুক্তা বলে।
★ ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা মিঠাপানির ঝিনুকে ব্যাপক সংখ্যক ইমেজ মুক্তা উত্পাদনে সফলতা অর্জন করেছে। ইমেজ মুক্তা এমন এক ধরনের মুক্তা যা সচরাচর দেখা যায় গোল মুক্তা থেকে আলাদা। এগুলো সাধারণত চ্যাপ্টা আকৃতির। ঝিনুকের ভেতরে কোনো কিছু নকশা বিশেষ পদ্ধতিতে স্থাপন করলে ধীরে ধীরে সে নকশাটি ধারণ করে মুক্তায়। বিজ্ঞানীরা জানান, ইমেজ ঝিনুকে স্থাপন করার জন্য সাধারণত বড় আকৃতির ও চ্যাপ্টা আকৃতির ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে মোম, প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি দিয়ে কোনো কিছুর নকশা (প্রতিচ্ছবি) তৈরি করে তা ঝিনুকের দেহের অভ্যন্তরে ম্যান্টাল টিস্যুর নিচে স্থাপন করা হয়। একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১৫টি মেন্টাল টিস্যু প্রবেশ করানো হয়। ফলে ১০ থেকে ১২টি পর্যন্ত মুক্তা পাওয়া যায়। টিস্যুর চারপাশে ন্যাকার সিক্রেশন অর্থাত্ এক ধরনের লালা নিঃসরণ হয়। ক্রমাগত নিঃসৃত এ লালা জমাট বেঁধে মুক্তায় পরিণত হয়। এ স্তরটি যতটা পুরু হয় মুক্তার আকারও তত বড় হয়। অপারেশনের পরে ঝিনুক পুকুর বা জলাশয়ে ছেড়ে দিলে ৭-৮ মাস পর যে নকশাটি ঝিনুকের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছিল তার উপর প্রলেপ পড়ে হুবহু সেই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উত্পাদিত হয়। এভাবে ইমেজ মুক্তায় বিভিন্ন নাম, পাখি, মাছ, নৌকা, অলংকার, কোর্ট পিন, সো পিসসহ নানা ধরনের দৃষ্টিনন্দন প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হচ্ছে। যা নারীদের পোশাক পরিচ্ছদ সৌন্দর্য বর্ধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আবার গৃহ সজ্জায়ও ইমেজ মুক্তার কদর পৃথিবী জুড়ে রয়েছে।
★ আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল, যেমন- কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, চিড়িংগা, পটুয়াখালীতে সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। ঝিনুকের মূল্যবান ও আকর্ষণীয় সামগ্রীর মধ্যে লাইটশেড, ঝাড়বাতি, পর্দা, চাবির রিং, টেবিল ল্যাম্প, ঝাড়, ফুল, অ্যাশট্রে, কানের দুল, মালা, হাতের চুড়ি, চুলের ক্লিপসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল, পশু-পাখির মূর্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ঝিনুকের এসব সামগ্রীর কদর দিন দিন বাড়ছে। ঝিনুকের তৈরি নিত্যনতুন ডিজাইনের সামগ্রী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঝিনুক সামগ্রীর চাহিদাও রয়েছে। আজকাল শুধু ঝিনুকের সামগ্রীই নয় ঝিনুকের মাংসেরও যথেষ্ট চাহিদা ও কদর রয়েছে। ঝিনুক থেকে পান খাওয়ার চুন তৈরি করা হয়। ঝিনুকের গুঁড়া মৎস্য ও পোলট্রি ফার্মে খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশে ঝিনুক একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হয়েছে।
★ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায় এটা আমরা সবাই জানি; কিন্তু কিভাবে তৈরি হয় এই মুক্তা? আসলে সব ধরনের ঝিনুকে কিন্তু মুক্তা তৈরি হয় না। পার্ল অয়েস্টার নামের বিশেষ ধরনের ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায়। যখন কোনো বালুকণা বা এমন ছোট কোনো উপাদান ঝিনুকের খোলে ঢুকে পড়ে, তখন ঝিনুক নেকর বা শুক্তিপুট (মাদার অব পার্ল নামে পরিচিত) নামের এক ধরনের পদার্থ দিয়ে ওটা ঢেকে ফেলে। কয়েক বছরের মধ্যে এর ওপরের একটার পর একটা আবরণ পড়ে।আর এভাবেই তৈরি হয় মুক্তা। মুক্তার প্রকৃতি, রং আর আকার নির্ভর করে শুক্তিপুটের রং আর মূল উপাদানের গঠনের ওপর। এখন অবশ্য কৃত্রিম মুক্তাও পাওয়া যায়; কিন্তু ওগুলো থেকে প্রাকৃতিক মুক্তা অনেক দামি। খামারে ঝিনুক চাষও করা হয় মুক্তার জন্য।
★ সব ঝিনুকে কিন্তু মুক্তা মেলে না। আবার সব মুক্তাই মূল্যবান নয়। ১৯৩৪ সালে ফিলিপাইনে পাওয়া গিয়েছিল মস্ত এক মুক্তা। ৭ কেজি ওজনের সেই মুক্তার দাম ধরা হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার। এর বহু পরে, ২০০৬ সাল নাগাদ সেই ফিলিপাইনেই আরেকটা বিরাট মুক্তা পাওয়া যায়। প্রায় ৩৭ কেজি ওজনের এই মুক্তার দাম ধরা হয়েছিল প্রায় দশ কোটি মার্কিন ডলার।
গিনেস বুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ যাবত্ পাওয়া যাওয়া সবচেয়ে বড় ঝিনুকটি হলো প্যাসিফিক অয়েস্টার বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতের ঝিনুক। ওটার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় চৌদ্দ ইঞ্চি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ডেনমার্কে এটি পাওয়া যায়।
★ অনেকে মনে করতে পারে যে ঝিনুক থেকে মুক্তা নিয়ে নিলে ঝিনুক বুঝি মারা যায়। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। মুক্তাচাষিরা খুব সাবধানে বিশেষ ছুরির সাহায্যে মুক্তা তুলে নেয়, এতে ওই ঝিনুক মারা পড়ে না এবং পরেও আবার মুক্তা উত্পাদন করতে পারে। হাজার হাজার বছর আগ থেকেই মানুষ সাগর থেকে মুক্তার জন্য ঝিনুক সংগ্রহ করছে। হান রাজবংশের আমলে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঝিনুক সংগ্রহ করা হতো।
পারস্য উপসাগর, মেক্সিকো উপকূল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার আশপাশের সাগর থেকে প্রচুর প্রাকৃতিক মুক্তা পাওয়া যায়। সাগরে ডুব দিয়ে ঝিনুক সংগ্রহ করার কাজটা মোটেই সহজ নয়। আগে স্রেফ দম বন্ধ করে পানিতে ডুবে ঝিনুক খুঁজতে হতো। আধুনিক জমানায় ডুবুরিরা নানা আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে। তবে জাপানে আমা ডুবুরিরা এখনো পর্যটকদের
আকৃষ্ট করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া ঝিনুক সংগ্রহের কাজ করে থাকে।
পানিতে ডুব দিয়ে ঝিনুক বা মুক্তা সংগ্রহ করা চাট্টিখানি কথা নয়।
★ দিনে একটা ঝিনুক ৫০ গ্যালন পানি পরিষ্কার করে; কিন্তু কিভাবে করে? একটা ঝিনুক খাবারের খোঁজে প্রচুর পরিমাণ পানিকে এর শরীরের ভেতর দিয়ে পাম্প করে। প্লাংকটনসহ বিভিন্ন খুদে কণা এসময় ঝিনুকের শরীরের এক ধরনের আঠালো পদার্থে আটকে যায়। নিজের প্রয়োজনেই এগুলো খেয়ে ফেলে ঝিনুকরা; কিন্তু একই সঙ্গে পানি থেকে অতিরিক্ত শৈবাল, ক্ষতিকর কণা দূর করে সাগরের অন্যান্য প্রাণীর জন্য ভালো অবস্থায় রাখে জলের পরিবেশ।
খাদ্য হিসেবেও ঝিনুক বড্ড সুস্বাদু। জিংক, ফ্যাটি এসিডসহ নানা খনিজে পরিপূর্ণ। ভিটামিন ‘এ’ আর ‘বি’-ও আছে ঝিনুকের মাংসে। এটি প্রাচীন রোম ও মিসরে ছিল খুব জনপ্রিয় খাবার। এখন তো বিভিন্ন দেশের রেস্তোরাঁয়ই ঝিনুকের ম্যানু পাওয়া যায় ।
★ মুক্তা হলো একমাত্র রত্ন, যা জীবিত কোনো প্রাণী তৈরি করে।
★ মুক্তা যে ধরনের ঝিনুকে পাওয়া যায়, তারা পুরুষ হিসেবে জন্ম নিলেও তিন বছর বয়সের মধ্যে মেয়েতে রূপান্তরিত হয়।
★ এখন মিঠা পানিতেও মুক্তার জন্য ঝিনুক চাষ হয়। তবে এ ধরনের মুক্তা লবণাক্ত পানিতে উত্পাদিত মুক্তা থেকে অনেক কম মূল্যবান। এ ধরনের মুক্তা উত্পাদনে সবচেয়ে এগিয়ে চীনারা।
★ এখন বাজারে যেসব মুক্তা পাওয়া যায়, তার ৯৯ ভাগই কৃত্রিম বা চাষ করা
★ এদেশে শীতকালের স্থায়িত্ব কম বরং প্রায় সারা বছর উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। এ পরিবেশ ঝিনুকের দৈহিক বৃদ্ধি ও মুক্তা চাষের অনুকূল। এছাড়া, এদেশের ঝিনুক থেকে সংগ্রহ করা মুক্তার রং যথেষ্ট উজ্জ্বল। যা বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত জলাশয়। যেখানে একই সঙ্গে মাছ ও ঝিনুকের চাষ সম্ভব। রয়েছে শ্রমশক্তি।

 

ভিডিওটি দেখুন:

https://youtu.be/CwtjkSpzMyg

ভিডিওটি দেখুন:

https://youtu.be/CwtjkSpzMyg

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!