একনজরে লগারিদম | Logarithm at a glance | Acnojore.com | একনজরে.কম

লগারিদমের সহজ সংজ্ঞাঃ লগারিদম হল সূচক লেখার আরেকটি নিয়ম। লগ আসলে সূচক খুঁজে বের করে।

(১) লগ (log) হচ্ছে এমন একটি অপারেটর যার কাজ অনেক বড় বড় সংখ্যাকে ছোট করে দেয়া। আর লগের এই ছোট মান দ্বারা সেই বড় মানটি বের করে ফেলা সম্ভব। যেমনঃ একটি সংখ্যা ১,০০,০০,০০০ ধরে নেয়া যাক। এখন আমরা ১০ ভিত্তিক একটি লগ নিলাম এবং আমাদের সংখ্যাটিকে সেই ১০ ভিত্তিক লগের ভেতর ফেলে দিলাম। তাহলে, আমাদের মান আসবে মাত্র ৭!

(২) “লগের ভিত্তি” বা “লগের বেইজ” ছাড়া কিন্তু লগ কখনই কাজ করতে পারে না। তাই প্রতিটা লগে অবশ্যই এর ভিত্তি বলে দেয়া থাকতে হবে। আর এই ভিত্তি থাকে log এর g অক্ষরের গোঁড়ায়। যা লগের বেইজ লেখার স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম। লগের বেইজ লেখা শেষ। এবার যেই সংখ্যাকে আমরা ছোট করতে চাই, সেই সংখ্যাকে লিখতে হবে “লগের বেইজ” এর ঠিক উপরে। যেইভাবে আমরা সাধারণত কোন সংখ্যার উপর “power” বা “to the power” বা “ঘাত” লিখে থাকি সেইভাবে।

(৩) লগ সর্বদা “power” বা “to the power” বা “ঘাত” নিয়ে কাজ করে। আর ‘লগের ভিত্তি’ বা ‘লগের বেইজ’ মূলত সেই কাজটি পরিচালনা করে থাকে।

(৪) কোন লগারিদম বা লগের অংকে input এ একটি সংখ্যা দেয়া হয়। লগের কাজ হল সেই সংখ্যাকে লগের বেইজ এর “power”হিসেবে প্রকাশ করা। যা হচ্ছে ঐ লগের ফলাফল। অর্থাৎ, লগের ফলাফল হচ্ছে বেইজ এর “power” বা”ঘাত”।

যেমনঃ প্রথমে আমরা ১,০০,০০,০০০ সংখ্যাটি input হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম এবং লগের ভিত্তি বা বেইজ হিসেবে নিয়েছিলাম ১০ কে। যার ফলে এই লগের ফলাফল আসে ৭. এখন একটু লক্ষ্য করা যাক। আমরা যেই সংখ্যা নিয়েছিলাম সেখানে শুন্য ছিল ৭ টি। আবার, লগের ভিত্তি হিসেবে নেয়া ১০ এর “power” বা “to the power” বা “ঘাত” যদি ৭ হয়, তবে তার মান হয় ১,০০,০০,০০০. অর্থাৎ, কোন সংখ্যাকে যদি ১০ ভিত্তিক একটি লগের মেশিনের মধ্যে ফেলা হয়, তাহলে সেই লগের মেশিন ঐ সংখ্যাটিকে ১০ এর “power” বা “to the power” বা “ঘাত” হিসেবে তৈরি করবে এবং তা ফলাফল হিসেবে প্রদর্শন করবে।

★★★এইভাবে কোন বড় সংখ্যাকে লগের মাধ্যমে ছোট করে ফেলা সম্ভব।

(৫) বাস্তব জীবনে লগের ব্যবহার

বাস্তবে আমরা অনেক কাজেই লগ ব্যবহার করে থাকি। যেমনঃ

(১) ভূমিকম্প মাপার মেশিনের নাম হচ্ছে “Richter magnitude scale” বা আমরা শুধু “রিক্টার স্কেল” বলে থাকি। এই স্কেল মূলত ১০ ভিত্তির লগ নিয়ে কাজ করে। রিক্টার স্কেল যখন ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দেখায়, তখন এর মান হচ্ছে 106. অর্থাৎ, ১০০০০০০. আবার যখন এই স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দেখায়, তখন এর মান হচ্ছে 107. অর্থাৎ, ১০০০০০০০. দেখা যাচ্ছে, ১০ ভিত্তিক লগের মান ১ বেড়ে গেলে, এর মান আসলে ১ বাড়ে না। এর মান বেড়ে যায় ১০ গুণ!

(২) শব্দের তীব্রতা মাপার একক ডেসিবেলও লগারিদম ব্যবহার করে হিসাব করা হয়। কারণ হলো, বড় পরিবর্তনকে ছোট আকারে প্রকাশ করা।

(৩) পানির অম্লত্ব পরিমাপের একক pH নির্ণয়েও রয়েছে লগারিদমের ব্যবহার। এটি মূলত হিসাব করা হয় প্রতি লিটার পানিতে কত সংখ্যক ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন রয়েছে। এর মান 0.0000001 থেকে প্রায় 1 পর্যন্ত হতে পারে। মানের এই বিশাল পরিবর্তন মনে রাখা বেশ কঠিন তো, তাই লগ ব্যবহার করে এই সীমাকে 0 থেকে 7 এর মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। 0 থেকে 7 এর মধ্যে একটা সংখ্যা মনে রাখা সহজ।

(৬) লগারিদমের ভিত্তি যা খুশি হতে পারে। এর কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। তবে, নির্দিষ্ট কিছু ভিত্তি বেশি ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে সবার আগে আসে 10. সাধারণভাবে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। আমাদের ক্যালকুলেটরে সাধারণত যেই log থাকে সেটার ভিত্তি দশ। যদি, লগের ভিত্তি লেখা না থাকে, তাহলে ধরে নিতে হয় এর ভিত্তি হচ্ছে 10

(৭) লগারিদমের মূল ব্যবহার হচ্ছে বড় সংখ্যাকে ছোট আকারে প্রকাশ করা ।

(৮) Sentence making=tens, right form of verb,sub verb agreement, vocabulary.

(৯) বীজগণিতের যে বিশেষ পদ্ধতিতে ax=M সম্পর্ক থেকে xএর মান পাওয়া যায় তাকে লগারিদম বলে।

যেমন 4x=16⇒x=2

আর লগারিদম প্রকাশ করা হয় x=logaM  এই আকারে।

(১০) নিধান বা ভিত্তি জানা না থাকলে কোনো সংখ্যার লগারিদম সম্ভব নয়।

(১১) কোনো সংখ্যার লগারিদমের মান নির্দিষ্ট নয় তা ভিত্তির/নিধানের উপর নির্ভর করে।

(১২) log28=3 এখানে (লগে) আমরা ৩ টা সংখ্যাকে নিয়ে কাজ করছি । 

(1) base , যে সংখ্যার ওপর আমরা  power বসাতে চাই । (উদাহরণে 2 ) 

(2) base এর ওপর যত power বসাতে চাই (উদাহরণে 3 বার , এই 3 ই হচ্ছে লগারিদম )

(3) base এর ওপর power বসিয়ে  যে সংখ্যাটি আমরা পেতে চাই (ওপরের উদাহরণে 8 )

(১৩) পাওয়ারের বিপরীত তত্ত্ব হচ্ছে লগারিদম। যেমন দেখুনঃ

       23 =2 x 2 x 2 =8

লগারিদমে এটিকে প্রকাশ করা হয়,  log28 = 3. যেখানে 2 হল লগের বেইস, 8 হল লগের

পাওয়ার।

(১৪) শুধু ধনাত্মক সংখ্যারই লগারিদম আছে, শূন্য বা ঋণাত্মক সংখ্যার লগারিদম নেই।

(১৫) লগারিদম-সম্পর্কিত মৌলিক কিছু বিষয়:

(i) যেকোনো ভিত্তিতে লগের পাওয়ার 1 হলে তার মান শূন্য হয়।যেমনঃ loga1= 0

(ii) লগের ভিত্তি এবং লগের পাওয়ার একই হলে তার মান 1 হয়।যেমনঃ logaa = 1

(iii) একই ভিত্তির সাপেক্ষে দুই বা ততোধিক সংখ্যার গুণফলের লগারিদম ওই একই ভিত্তির                     ওপর সংখ্যাগুলোর পৃথক পৃথক লগারিদমের সমষ্টির সমান।যেমনঃ

   loga(MN) = logaM+logaN

(iv) একই ভিত্তির সাপেক্ষে দুটি সংখ্যার ভাগফলের লগারিদম ওই একই ভিত্তির ওপর সংখ্যা দুটির পৃথক পৃথক লগারিদমের বিয়োগফলের সমান।যেমনঃ

  loga(M÷N) বা loga = logaM – logaN

(v) সূচকযুক্ত সংখ্যার লগারিদম, ওই সূচক ও ওই সংখ্যার লগারিদমের গুণফলের সমান।

যেমনঃ logaMr = rlogaM   অর্থাৎ,log223 = 3log22 = 3×1= 3

(vi) যদি লগের বেইস উল্লেখ না থাকে তবে ধরে নিতে হবে প্রদত্ত অংকে সব লগারিদমের বেইস সমান।

(১৬) e ভিত্তিক লগ। e একটি অমূলদ সংখ্যা। এর মান প্রায় 2.71828. মূলত, প্রকৌশল বিদ্যায় e ভিত্তিক লগের ব্যবহার বেশি। একে ন্যাচারাল লগারিদম বলা হয় এবং ln দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ln দ্বারা বোঝায় কোন সংখ্যার e ভিত্তিক লগ।

(১৭) কম্পিউটার বিজ্ঞানে এবং ইলেকট্রনিক্সে 2 ভিত্তিক লগের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে।

(১৮) ভিত্তি যাই হোক না কেন, তার ঘাত শূন্য হলেই মান 1 হবে।

সূত্র ১।   logaa = 1 

সূত্র ২।   loga1 = 0

সূত্র ৩।   logaaM = M

সূত্র ৪।   loga(MN) = logaM + logaN

সূত্র ৫।  loga = logaM – logaN

সূত্র ৬।   logaMn = nlogaM

সূত্র ৭।   logaM = logab×logbM  অথবা logbM× logab

সূত্র ৮।   logab = 1/logba

সূত্র ৯।   যদি,  ax=M হয়, তবে x = logaM

(১৯) বিভিন্ন প্রকার লগারিদমঃ

Logarithm এর বেস ১০ হলে একে বলা হয় ১০ ভিত্তিক লগারিদম, বেস ২ হলে একে বলা হয় ২ ভিত্তিক লগারিদম। আর বেস e (e একটি অমূলদ সংখ্যা। এর মান হল 2.7182818284….) হলে একে বলা হয় ন্যাচারাল লগারিদম। একে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে log না লিখে ln লিখা হয়।

(২০) 10 ভিত্তিক লগারিদম সাধারণ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটা দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কোন সংখ্যাকে 10 দিয়ে সর্বোচ্চ কতবার নিঃশেষে ভাগ করা যায়।

যেমনঃ log10(1000)=3

এটার থেকে আপনি বুঝতে পারেন 1000 কে 10 দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার নিঃশেষে ভাগ করা যায়।আমরা দৈনন্দিন কাজে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করি তাই সাধারণ হিসাবে ১০ ভিত্তিক লগারিদম যথেষ্ট।

★আবার ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে কাজ করে যার ভিত্তি ২। এজন্য কম্পিউটার প্রকৌশলে ২ ভিত্তিক লগারিদমের ব্যবহার প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা যায়।

(২১) সংজ্ঞা:লগারিদম হল একটি অপারেটর যা অন্য দুইটি সংখ্যা ব্যবহার করে অন্য আরেকটি সংখ্যা(সূচক) জানায়।

ব্যাখ্যা:প্রথম দুইটি সংখ্যার একটি হল ভিত্তি (বেস, যার মান 1 হবে না) যার উপরে অন্য সংখ্যাটির (ধনাত্মক সংখ্যা,শূন্য ব্যতীত)লগারিদমের মান বের করা হয়।

★লগারিদম হলো সূচক প্রক্রিয়ার বিপরীত। যেমন গুণ এবং ভাগ প্রক্রিয়া একে অপরের বিপরীত।

সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা:কোন একটি সংখ্যার (শূন্যের চেয়ে বড়) লগারিদম (ভিত্তির সাপেক্ষে) হলো এমন একটি সংখ্যা(সূচক),যাকে ভিত্তির ঘাত (পাওয়ার) হিসেবে উন্নীত করলে প্রথমোক্ত সংখ্যাটি পাওয়া যায়।

যেমন:

(২২) একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শর্ত কিন্তু শুধু ভিত্তির(base) জন্য; সূচকের জন্য কোন শর্ত নেই।(s)

(২৩) একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো,লগারিদম ফাংশনে একটা শর্ত জুড়ে দেয়া আছে। কিন্তু সুচকীয় ফাংশনে কোন শর্ত নেই।

★★শর্তানুযায়ী লগারিদমের ভিত্তি (base) কখনও

ঋণাত্মক হতে পারে না, 1 ও হতে পারে না।

(২৪) গণনা সহজ করার জন্য সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জন নেপিয়ার লগারিদম এর সূচনা করেন। স্লাইড রুল এবং লগ সারণি ব্যবহার করে সহজে গণনার জন্য নাবিক, বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী এবং অন্যান্যরা খুব দ্রুতই এগুলো গ্রহণ করেন। বিরক্তিকর বহুসাংখ্যিক গুণনের ধাপসমূহ লগারিদমের নিয়মে একটি সরল যোগে পরিণত হয়। লগারিদমের নিয়মানুযায়ী সংখ্যাসমূহের গুণফলের লগারিদম এর মান সংখ্যাগুলোর একক লগারিদমের মানের যোগফল। অর্থাৎ, logb(xy) = logb(x) + logb(y)

(২৫) সূচক, ভিত্তি ও সূচকীয় রাশি কী?

কোনো রাশিতে একই উৎপাদক যতবার গুণ আকারে থাকে তাকে ঐ উৎপাদকের সূচক বলে। আর উৎপাদকটিকে ভিত্তি বলে। যেমন:

8= 2 x 2 x 2 = 23

এখানে, 2 উৎপাদকটি 3 বার আছে। সুতরাং, সূচক বা ঘাত = 3, ভিত্তি = 2, সূচকীয় রাশি = 23

আবার,

a x a x a x a x a = a5

এখানে, a উৎপাদকটি 5 বার আছে। সুতরাং, সূচক বা ঘাত = 5, ভিত্তি = a, সূচকীয় রাশি = a5

সুচক শূন্য হলে কী হবে?

কোন ভিত্তির সূচক শূন্য হলে তা 1 এর সমান হবে।

যেমন, 70 = 1

সূচকের মান নির্ণয় করি:

কোন ভিত্তিকে সেই সংখ্যা দিয়েই কতবার গুণ

করতে হবে সূচক তা নির্দেশ করে।

উদাহরণ অনুযায়ী, 43 দ্বারা বোঝা যায় ভিত্তি 4

কে তার নিজের সাথে 3 বার গুণ করতে হবে:

43 = 4 x 4 x 4

= 64

(২৬) সূচক মূলত গুণের পুনরাবৃত্তি।

(২৭) গণিতের ক্ষেত্রে লগারিদম হলো সূচকের বিপরীত প্রক্রিয়া। এর অর্থ কোনো সংখ্যার লগারিদম হলো সেই সূচক যেটাকে একটি নির্ধারিত মানের, (ভিত্তির) ঘাত হিসাবে উন্নীত করলে প্রথমোক্ত সংখ্যাটি পাওয়া যায়।

সাধারণ ক্ষেত্রে লগারিদম একটি সংখ্যা (ভিত্তি)কতবার গুণ করা হলো সেটা গণনা করে। যেমন, ১০০০ এর ১০ ভিত্তিক লগের মান ৩, এর অর্থ হলো ১০ এর ঘাত ৩ এ উন্নীত করলে ১০০০ পাওয়া যায় (১০০০ = ১০ x ১০ x ১০ = ১০)। এখানে ১০ সংখ্যাটি ৩ বার গুণ করলে ১০০০ পাওয়া যায়।

আরও সাধারণভাবে বলা যায়,কোনো ধনাত্মক প্রকৃত সংখ্যাকে কোনো প্রকৃত ঘাতে উন্নীত করলে সবসময় ধনাত্মক ফল পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!