(১) বাংলা ভাষার বা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন – চর্যাপদ।
(২) চর্যাপদ আবিষ্কার করেন- মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
(৩) চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয়– ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবারের পুঁথিশালা থেকে।
(৪) চর্যাপদ প্রথম প্রকাশিত হয়– ১৯১৬ সালে।
(৫) প্রথম প্রকাশের সময় চর্যাপদের নাম ছিল- ‘হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা।’
(৬) চর্যাপদের রচিয়তারা ছিলেন- বৌদ্ধ ধর্মালম্বী।
(৭) চর্যাপদের রচিয়তার সংখ্যা- ২৪ জন (মতান্তরে ২৩ জন)।
(৮) চর্যাপদের বর্ণিত আছে- বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্ব কথা।
(৯) চর্যাপদ রচিত- মাত্রাবৃত্ত ছন্দে।
(১০) চর্যাপদে মােট পদ ছিল- ৫১টি।
(১১) চর্যাপদের এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পদ সংখ্যা সাড়ে ৪৬ টি।
(১২) চর্যাপদে সবচেয়ে বেশী পদ রচনা করেছেন- কাহ্নপা।
(১৩) ‘কাহ্নপা’র রচিত পদের সংখ্যা- ১৩টি।
(১৪) চর্যাপদের সবচেয়ে প্রাচীন লেখক- লুইপা।
(১৫) চর্যাপদের প্রথম পদটির রচয়িতা- লুইপা।
(১৬) চর্যাপদের ভাষা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য। সেই কারণে চর্যাপদের ভাষাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- সান্ধ্যভাষা/ সন্ধ্যা ভাষা/ আলাে আঁধারি ভাষা (অর্ধ-প্রকাশিত এবং অর্ধ-লুকানো) নামে অভিহিত করেছেন।
(১৭) চর্যাপদের অপরনাম – চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগীতি।
(১৮) চর্যাপদ কিসের সংকলন? – গানের সংকলন।
(১৯) চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা তা প্রথম প্রমাণ করেন- ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়।
(২০) চর্যাপদের উল্লেখযোগ্য সংস্কৃত টীকাকার- মুনিদত্ত।
[★★] বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সকল গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের সূচীপত্র দেখুন।
(২১) চর্যাপদ রচিত হয় – পাল শাসনামলে।
(২২) চর্যাপদে মােট ৬টি প্রবাদ বাক্য পাওয়া যায়।
(২৩) চর্যাপদের একজন কবিকে মহিলা কবি হিসেবে অনুমান করা হয় তার নাম – কুক্কুরী পা।
(২৪) চর্যাপদের যে কবির রচিত পদটি পওয়া যায় নি- তন্ত্রীপা।
(২৫) চর্যাপদ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রথম পদটি লুইপার রচিত, তা হলাে- ‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল/ চঞ্চল এ পইঠা কাল’ অর্থাৎ দেহ তরুর মত। পাচঁটি তার ডাল, চঞ্চল চিত্তে কাল প্রবেশ করেছে।
(২৬) ‘চর্যাপদ’ গুলাে রচিত হয়- সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে ৬৫০-১২০০ ও ড. সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়ের মতে ৯৫০-১২০০ সালের মধ্যে চর্যাপদ রচিত হয়। মূল কথা, চর্যাপদ পাল ও সেন আমলে রচিত।
(২৭) চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কার করেন- ড. প্রবােধ চন্দ্র বাগচী।
(২৮) বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্য সংকলন- চর্যাপদ (পাল আমলে রচিত)।
★★★ চর্যাপদের ২৪ জন কবি হলেন – লুইপা, কুকুরীপা, বিরুআপা, গুণ্ডরীপা, চাটিলপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা,কামলিপা, ডােম্বীপা, শান্তিপা, মহিত্তাপা, বীণাপা, সরহপা, শবরপা, আজাদেবপা, ঢেণ্ডনপা, দারিকপা,ভাদেপা, লাড়ীডােম্বীপা, তাড়কপা, কঙ্কণপা, জঅনন্দিপা, ধামপা , তন্ত্রীপা। -এরা পদ রচনা করতেন বলে এদের নামের শেষে সম্মান করে পাদ বা পা বলা হতাে। আজকের দিনে যেমন কবি বলা হয়।
★★★চর্যাপদ শুধু প্রাচীন বাংলা সাহিত্যেরই নিদর্শন নয়, প্রাচীন বাংলা গানেরও নিদর্শন। প্রতিটি পদের শুরুতে রাগ-তাল ও প্রতি জোড়-পদে ‘ধ্রুব’ শব্দের উল্লেখ থাকায় নিশ্চিত প্রমাণিত হয় যে, এগুলি তখন গাওয়া হতো। এ ছাড়া পদগুলি থেকে তৎকালীন বাঙালি জীবনের আচার-আচরণ ও সমাজের বাস্তবঘন পরিচয়ও পাওয়া যায়। যেমন তখনকার মানুষ হরিণ শিকার, নৌকা চালনা, চেঙারি তৈরি, শুঁড়ির কাজ ইত্যাদি করত। কাড়া-নাকাড়া ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বর-কনেকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হতো। সমাজে যৌতুক প্রথা প্রচলিত ছিল। গরু ছিল গৃহপালিত পশু; হাতিরও উল্লেখ আছে। মেয়েরা পরিধানে ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জার মালা এবং কর্ণে কুন্ডল পরত। টাঙ্গি, কুঠার, নখলি বা খন্তা ছিল উল্লেখযোগ্য অস্ত্র। তবে সমকালীন সমাজের এসব চিত্র অঙ্কন করলেও চর্যাকারেরা প্রধানত ছিলেন বৈরাগ্যপন্থি, জগৎমুখী নন।
★ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে পুঁথিটি দেখেছিলেন, সেটি ছিল তালপাতার।
★ চর্যাপদের তালপাতার পুথিতে লেখা রয়েছে পূর্ব-ভারতের হাজার বছর আগের জীবনযাত্রা, গানের ছলে। এটি মূলত তান্ত্রিক-বৌদ্ধমতের গানের সংকলন।হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে পুঁথিটি দেখেছিলেন, সেটি ছিল তালপাতার।
[★★] বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সকল গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের সূচীপত্র দেখুন।