একনজরে ” ধ্বনিতত্ত্ব”।

(১) ভাষার মূল উপাদান হচ্ছে ধ্বনি।

(২) ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি।

(৩) ধ্বনি উচ্চারণে মানব শরীরের যেসব প্রত্যঙ্গ জড়িত সেগুলোকে একত্রে বাগযন্ত্র বলে।

(৪) স্বরযন্ত্র মানবদেহে শব্দ উৎপন্ন করে।

(৫) বর্ণ হচ্ছে ধ্বনি নির্দেশক প্রতীক।

(৬) মাত্রার উপর ভিত্তি করে বর্ণ তিন প্রকার। যথা- মাত্রাহীন বর্ণ, অর্ধমাত্রার বর্ণ, পূর্ণমাত্রার বর্ণ।

(৭) পূর্ণমাত্রার বর্ণ- ৩২ টি।

(৮) অর্ধমাত্রার বর্ণ- ৮ টি।

(৯) মাত্রাহীন বর্ণ- ১০ টি।

(১০) মৌলিক স্বরধ্বনি- ৭টি।

(১১) যৌগিক স্বরধ্বনি- ২৫টি।

(১২) বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০ টি বর্ণ রয়েছে।

(১৩) স্বরবর্ণ- ১১ টি।

(১৪) ব্যঞ্জনবর্ণ- ৩৯ টি।

(১৫) আধুনিক বাংলা ভাষায় মোট ৪৫ টি বর্ণের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়।

(১৬) যৌগিক স্বরজ্ঞাপক বর্ণ ২ টি- ঐ, ঔ

(১৭) স্পর্শবর্ণ- ২৫ টি (ক থেকে ম পর্যন্ত)।

(১৮) বর্গীয় ধ্বনি- ২৫ টি (ক থেকে ম পর্যন্ত)।

(১৯) বর্গের সংখ্যা- ৫ টি।

(২০) প্রতিটি বর্গে বর্ণ থাকে- ৫ টি করে।

(২১) কম্পনজাত ধ্বনি ১টি- র।

(২২) তাড়নজাত ধ্বনি ২ টি- ড়, ঢ়।

(২৩) উষ্মধ্বনি বা শিশ ধ্বনি ৪ টি- শ, ষ, স, হ।

(২৪) পার্শ্বিক ধ্বনি ১টি- ল।

(২৫) নিলীন ধ্বনি ১ টি- অ।

(২৬) খন্ড ব্যঞ্জনধ্বনি ১ টি- ৎ ।

(২৭) পরাশ্রয়ী ধ্বনি- ৩টি- ং, ঃ, ঁ ।

(২৮) পরাশ্রয়ী বর্ণ ৩টি- ং, ঃ, ঁ ।

(২৯) অন্তঃস্থ বর্ণ/অন্তঃস্থ ধ্বনি ৪টি- য, র, ল, ব।

(৩০) নাসিক্য ধ্বনি ৩টি।

(৩১) মূলত নাসিক্য বর্ণ ৭টি যদিও বর্গীয় বর্ণের মধ্যে আছে ৫ টি, যথা- ঙ,ঞ,ণ,ন,ম আর অতিরিক্ত ২টি যথা – ং,ঁ।

(৩২) আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি ৫ টি- ঙ, ঞ, ণ, ন, ম। (বর্গে)

(৩৩) বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় :

১. স্বরধ্বনি ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।

(৩৪) স্বরধ্বনি: যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পূর্ণভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনির সৃজন হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা  অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

(৩৫) ব্যঞ্জনধ্বনি: যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না এবং যে ধ্বনি সাধারণত অন্য ধ্বনিকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ক্, খ্, গ্, ঘ্, প্, স্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলোকে প্রকৃষ্টভাবে শ্রুতিযোগ্য করে উচ্চারণ করতে হলে স্বরধ্বনির আশ্রয় নিতে হয়। যেমন: (ক্+অ=) ক; (গ্+অ=) গ; (প্+অ=) প ইত্যাদি।

(৩৬) খাঁটি বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধন্য ধ্বনি ব্যবহৃত হয় না।

(৩৭) ভাষার বাহন- ধ্বনি।

(৩৮) মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি।

(৩৯) বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে।

(৪০) ধ্বনি হচ্ছে উচ্চারণের মাধ্যম।

(৪১) বর্ণ হচ্ছে লিখার মাধ্যম।

(৪২) ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না।

(৪৩) বাংলা ভাষায় মোট বর্ণ সংখ্যা আছে ৫০টি।

(৪৪) বাংলা ভাষায় বর্ণমালা ১ টি। কারণ, ৫০ টি বর্ণ মিলে মালা হয়েছে ১ টি।

(৪৫) ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি।

(৪৬) মানুষ ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে। ফুসফুস থেকে বাতাস বাইরে আসার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়। ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তবে সব ধ্বনিই সব ভাষা গ্রহণ করে না।

(৪৭) ধ্বনি মানুষের মুখনিঃসৃত বায়ু থেকে সৃষ্ট, তাই এর কোনো আকার নেই। এগুলো মানুষ মুখে উচ্চারণ করে এবং কানে শোনে।

(৪৮) ভাষা লিখে প্রকাশ করার সুবিধার্থে ধ্বনিগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কিছু প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নাম বর্ণ। এই বর্ণসমূহের সমষ্টিই হলো বর্ণমালা।

(৪৯) ধ্বনির মূল উৎস- ফুসফুস।

(৫০) ফুসফুস থেকে আসা বাতাসের আঘাতে ধ্বনি তৈরি হয়।

(৫১) ‘ং’ বর্ণটি অন্তস্বরবিহীন ‘ঙ্’ বর্ণের মতই উচ্চারণ হয়। যেমন: রং—রঙ্, ঢং—ঢঙ্। তাই ‘ং’-কে ধ্বনি হিসেবে গণ্য করা হয় না।

(৫২) ‘ঁ’ চন্দ্রবিন্দু আনুনাসিক ধ্বনির প্রতীক। এটি কেবল স্বরবর্ণ বা স্বরের সঙ্গে যুক্ত হয় নিরপেক্ষভাবে এর উচ্চারণ অসম্ভব। যেনম: দন্ত > দাঁত, বন্ধন > বাঁধন, বন্ধ > বধুঁ। চন্দ্রবিন্দু ( ঁ) কখনো ‘ম’এর রূপও ধারণ করে (ওঁ> ওম্)। তাই চন্দ্রবিন্দু ( ঁ)-কে ধ্বনি হিসেবে গণ্য করা হয় না।

(৫৩) ‘ঞ’ বর্ণের আর অঁ-এর মতো। আবার, ঞ-র সঙ্গে (চ, ছ, জ, ঝ) যুক্ত হলে ঞ-র ধ্বনি ন-র মতো হয়। যেমন: অঞ্চল-অন্ চল। চ-র পরে ঞ যুক্ত করলেও ঞ-র ধ্বনি ন-র মতো থাকে। যেমন: যাচ্ঞা- জাচ্ না। কিন্তু শব্দের প্রথমে জ্ঞ থাকলে জ্ঞ এর পরিবর্তে ‘গ্যাঁ এর ‘মতো হয়। যেমন: জ্ঞান-গ্যাঁন্, মাঝে থাকলে ‘গগ্যাঁ’ এর মতে হয়। যেমন – বিজ্ঞান- বিগ্ গ্যাঁন্, আবার শেষে থাকলে ‘গগোঁ’ এর মতো হবে। যেমন – বিজ্ঞ- বিগ্ গোঁ ইত্যাদি।

(৫৪) ‘ণ’ বর্ণের আর ‘ন’ বর্ণের উচ্চারণ একই। যেমন— ধরণ-ধরন, আপণ-আপন, মণ-মন ইত্যাদি। লক্ষ করুন, বর্ণ আলাদা কিন্তু উচ্চারণ একই তাই ‘ণ’—কে ধ্বনি হিসাবে ধরা হয় না।

(৫৫) বাংলা লিপির উৎস লিপি- ব্রাহ্মী লিপি।

(৫৬) ং উচ্চারণ হয়- ঙ এর মত, ঃ উচ্চারণ হয়- হ এর মত।

(৫৮) ং , ঃ এ দুটি বর্ণকে বলা হয়- অযোগবাহ বর্ণ।

(৫৯) স্বরচিহ্ন- ১০ টি। ‘অ’ এর স্বরচিহ্ন হয় না।

(৬০) ‘সন্ধি’ ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়।

(৬১) ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয় – ধ্বনি, সন্ধি, ণত্ব ও ষত্ব বিধান।

(৬২) স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ: অ-ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত হলে পূর্ণরূপের বদলে সংক্ষিপ্ত রূপ পরিগ্রহ করে। স্বরবর্ণের এ ধরনের সংক্ষিপ্তরূপকে ‘কার’ বলে। স্বরবর্ণের ‘কার’-চিহ্ন ১০টি। যথা:

আ—কার ( া)— মা, বাবা, ঢাকা।

ই—কার ( ি)— কিনি, চিনি, মিনি।

ঈ—কার ( ী)— শশী, সীমানা, রীতি।

উ—কার (  ু )— কুকুর, পুকুর, দুপুর।

ঊ—কার (  ূ )— ভূত, মূল্য, সূচি।

ঋ—কার (  ৃ )— কৃষক, তৃণ, পৃথিবী।

এ—কার ()ে— চেয়ার, টেবিল, মেয়ে।

ঐ—কার ()ৈ— তৈরি, বৈরী, নৈঋত।

ও—কার ( ো)— খোকা, পোকা, বোকা।

ঔ—কার ( ৌ)— নৌকা, মৌসুমি, পৌষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!