শরয়ী দলীলনির্ভর দেশের প্রচলনঃ ইমামগণের উদারতা বনাম আমাদের দলান্ধতা ও বিভেদপ্রিয়তা!!!

শরয়ী দলীলনির্ভর দেশের প্রচলনঃ ইমামগণের উদারতা বনাম আমাদের দলান্ধতা ও বিভেদপ্রিয়তা!!!

লেখক: ড: আহমদ আলী 

আমাদের সলফ ও ইমামগণ শরয়ী সিদ্ধান্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে যথাসাধ্য দেশে শরয়ী দলীলনির্ভর প্রচলিত রীতির প্রতি নজর রাখতেন। তাঁরা দেশে কোনো মুজতাহিদ ইমামের মতানু্যায়ী প্রচলন লাভ করেছে-এরূপ কোনো রীতির পরিপন্থী ফাতওয়া প্রচার করে এবং সে আলোকে আমলের জন্য লোকদেরকে উৎসাহিত করে উম্মতের মধ্যে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে কিংবা তাদেরকে বিভক্ত করতে চাইতেন না।

একবার হুমাইদ রাহ. খলীফা উমার ইবনু আবদিল আযীয রাহ.-এর নিকট ফকীহদের মতপার্থক্য দূর করে সকলকে অভিন্ন মতের ওপর একত্র করতে আরয করলেন। তিনি জবাব দেন, “সাহাবীগণের মধ্যে মোটেরওপর মতপার্থক্য না থাকা আমার কাছে আনন্দের বিষয় নয়।” এরপর তিনি বিভিন্ন দেশে এ মর্মে নির্দেশ লিখে পাঠান, প্রত্যেক কওমই যেন নিজ নিজ দেশের ফকীহগণের মতের ভিত্তিতে ফায়সালা পেশ করেন। (দারিমী)

খলীফা হারুনুর রশীদ উম্মতের বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে সকলকে মুওয়াত্তার ওপর একমত করতে চেয়েছিলেন, তখন ইমাম মালিক রাহ. তাঁকে এরূপ কাজ করতে বাধা দেন এবং বলেন, “রাসূল সা.-এর সাহাবীগণ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গেছেন এবং তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁর নিকট থেকে যা শুনেছেন তা-ই বর্ণনা করেছেন। আর প্রত্যেক দেশের আমল সেই অবস্থার ওপরই স্থিতিশীলতা লাভ করেছে, যা রাসূল সা.-এর নিকট থেকে তাঁদের কাছে পৌঁছেছে। কাজেই আপনি লোকদেরকে তাদের স্ব স্ব অবস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করবেন না।”

একবার কাযী আবু ইয়ালা রাহ.-এর নিকট জনৈক ফকীহ এসে তাঁর কাছে ফিকহে হাম্বলী অধ্যয়ন করতে চাইলেন। তখন তিনি তাঁর দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। লোকটি তাঁর দেশ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করার পর তিনি বললেন, “তোমার দেশের সকলেই তো শাফিয়ী মাযহাব অধ্যয়ন করে, তবে তুমি কেন তাঁর মাযহাব ছেড়ে আমাদের মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট হলে?” লোকটি জবাব দিলো, আমি কেবল আপনার জ্ঞান গরিমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শাফিয়ী মাযহাব ছেড়েছি। তখন তিনি বললেন, “এরূপ কাজ তোমার জন্য মোটেই সমীচীন নয়। যদি তুমি তোমার দেশে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী হও আর বাকীরা শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী হয়, তবে তুমি এমন কোনো লোককে খোঁজে পাবে না, যে তোমার সাথে ইবাদত করবে, তোমার সাথে বসে ইলম চর্চা করবে। এরূপ অবস্থায় তোমার এ কাজ উম্মতের মধ্যে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। কাজেই তোমার দেশের লোকদের অনুসৃত মাযহাবের ওপর অটল থাকাই তোমার জন্য অধিক শ্রেয়।” (ইবনু তাইমিয়া)

আসুন, পাঠক ভাইয়েরা একটু ভাবি, আমাদের সর্বসমাদৃত ইমামগণ দেশে প্রচলিত শরয়ী দলীলনির্ভর আমলের  প্রতি কীরূপ উদার মনোভাব পোষণ করতেন আর আমরা কীরূপ দলান্ধতার পরিচয় দিচ্ছি এবং ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভেদ ও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছি!

(বিস্তারিত তথ্য ও সূত্র জানতে দেখতে পারেন আমার ‘তুলনামূলক ফিকহ ১ম খণ্ড’ প্. ১১৮-৯)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!