মানবসেবাও ইবাদত ও মহাপুণ্যের কাজ!!
লেখক: ড. আহমদ আলী
আত্মিক উন্নয়নই শুধু নয়; সেবামূলক কাজের ওপরও ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলামে গরীব, দুঃস্থ ও অনাথদেরকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব। যারা এতিমের প্রতি সদাচরণ করে না, দুঃস্থদের খাদ্য দান করে না -এমন লোকদের কথা পবিত্র কুরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে –
“আপনি কি এমন লোককে দেখেছেন, যে দীনকে অস্বীকার করে। সে তো ঐ ব্যক্তি যে এতিমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়, আর সে মিসকিনকে খাবার দানে মানুষকে উৎসাহিত করে না। ” (মাউনঃ১-৩)
ইসলাম ঘোষণা দেয়, মানুষের সেবা করলে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। মানুষকে নিয়েই তো আল্লাহর সব আয়োজন। এ দুনিয়ার সবকিছুই তিনি মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। রাসূল সা. বলেন,
“সৃষ্টিজীব হলো আল্লাহর প্রতিপাল্যস্বরূপ। কাজেই যে ব্যক্তি সৃষ্টির প্রতি সর্বাধিক কল্যাণ করবে, সে-ই হচ্ছে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়।” (আবু ইয়ালা ও বাইহাকী)
ইসলামের একজন অনুসারীর আল্লাহতে বিশ্বাস করার পর তার একটি প্রধান দায়িত্ব হলো, আল্লাহর বান্দাদের হক আদায় করা। আল্লাহ তাআলা দয়ালু হিসেবে হয়তো তাঁর প্রাপ্য ছেড়ে দিতে পারেন ; কিন্তু মানুষের প্রাপ্য যদি কেউ আদায় না করে, তা আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন না, যতক্ষণ না ঐ বান্দা তা মাফ করে দেয়। বস্তুত আন্তরিকতার সাথে মানুষের অধিকারসমূহ আদায় করা মুসলিম জীবনের অপরিহার্য শর্ত। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশ এতোটাই দঢ় যে, গৃহদ্বারে মানবেতর প্রাণী একটি কুকুরকে উপবাসী রেখে নিজে উদরপূর্ণ করে আহার গ্রহণ করা মুসলমানের জন্য শোভা পায় না। কুরআনে বলা হয়েছে, যারা এতিমের প্রতি বিরূপভাবাপন্ন, যারা ক্ষুধার্তকে অন্নদানে বিমুখ এবং যারা প্রতিবেশীর প্রতি উদাসীন, সেসব ইবাদতকারী ভর্ৎসনার যোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“সে (ধর্মের) ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন কি, সেই ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে, দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের সময় অন্নদান এতিম আত্মীয়কে অথবা ধুলায় ধুসরিত মিসকিনকে।” (আলবালাদঃ১১-১৬)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
সৎকর্ম শুধু এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে; বরং সৎ কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবীরসূলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মুহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম -মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য।”(আলবাকারাহঃ১৭৭)
সমাজের প্রতিটি মানুষ অপরের কল্যাণের জন্য। একজন অপরজনের বিপদাপদে সাহায্য করা ও সমবেদনা প্রকাশ করা আর্তমানবতার সেবার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দিক। রাসূল সা. বলেন,
“বিধবা রমণী ও গরীব -দুঃখীদের সেবাকারীদের মর্যাদা ও সম্মান আল্লাহর পথে জিহাদকারী অথবা রাতভর নামাজ আদায়কারী ও দিনভর রোজাপালনকারীর মর্যাদার সমপর্যায়ভুক্ত।” (বুখারী)
অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার অভাব দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলাও কিয়ামতের দিন তার একটি বিপদ দূর করে দেবেন।” (বুখারী)