আসুন, আমাদের ঈমানের বিশুদ্ধতা যাচাই করি!!
লেখক: ড. আহমদ আলী
অনেকেরই মনে এ প্রশ্ন জাগে, আমরা নিয়মিত আল্লাহর ইবাদত করি এবং তাঁর নিকট দুআ মুনাজাত করি; কিন্তু দুনিয়ায় এসব আমলের আধ্যাত্মিক সুফল ও ফজীলত দেখতে পাই না কেন?
এর একটি প্রধান কারণ হলো, আমরা নিয়মিত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ্জ করি সত্যি ; কিন্তু আমাদের অনেকেরই ঈমান বিশুদ্ধ নয়। আবার অনেকেই জানেও না, প্রকৃত ঈমান কী এবং এর দাবিগুলো কী কী?
আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. বলেন,
لَيَأتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَجْتَمِعُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ، وَلَيْسَ فِيْهِمْ مُؤْمِنٌ.
“লোকদের কাছে এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে, যখন তারা মসজিদগুলোতে সমবেত হবে; কিন্তু তাদের মধ্যে (প্রকৃত) ঈমানদার বলতে কেউ থাকবে না।” (হাকিম ও তাহাবী)
রাসূল সা.-এর যুগেও মুনাফিকরা নিয়মিত মসজিদে নববীতে তাঁর সাথে একত্রে নামাজ আদায় করতো; কিন্তু তারা প্রকৃত মুমিন ছিল না। এ কারণে তাদের সেই নামাজ কবুল হয়নি এবং এর আধ্যাত্মিক সুফলও তারা পায়নি।
বিভিন্ন হাদীসে রাসূল সা. নামাজ, রোজা, ইতিকাফ প্রভৃতি ইবাদত কবুল ও পুরস্কার লাভের উপযোগী হবার জন্য ঈমানের শর্ত আরোপ করেছেন। এ হাদীসগুলো থেকে জানা যায়, সত্যিকার ঈমান ব্যতীত কোনো আমলই আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল ও পুরস্কার লাভের উপযোগী নয় এবং দুনিয়ায় এসব আমলের আধ্যাত্মিক সুফলও পাওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, হাদীসগুলোতে ঈমান বলতে যেমন ইসলামের সামগ্রিক বিধিবিধানকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ ও মেনে নেয়াকে বোঝানো হতে পারে, তেমনি সংশ্লিষ্ট আমলের গুরুত্ব ও তার ফজীলতের প্রতি বান্দার দৃঢ় আস্থাকেও বোঝানো হতে পারে।
কেউ এ প্রশ্নও করতে পারে, বান্দার ঈমান আছে বলেই তো সে নামাজ পড়ছে, রোজা রাখছে। এরূপ অবস্থায় হাদীসগুলোতে ঈমানের শর্ত যোগ করার কারণ কী? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, এমনও হতে পারে যে, কোনো মুনাফিক কিংবা বদদীন তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশ্যে মুসলিমদের জামাতে শামিল হয়ে তাদের সাথে নিয়মিত নামাজ পড়ছে ও রোজা রাখছে; অথচ তার মধ্যে না আছে ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি কোনো সত্যিকার ঈমান, না আছে সংশ্লিষ্ট আমলের গুরুত্ব ও ফজীলতের প্রতি কোনো দৃঢ় আস্থা। এরূপ অবস্থায় সে নানা ইবাদত করে বটে; কিন্তু তার সেই ইবাদতগুলো তার ঈমানের প্রকৃত অভিব্যক্তি নয়; এগুলো কেবল প্রদর্শনমূলক ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ কারণেই তার সেই ইবাদতের মধ্যে আন্তরিকতা ও বিনয়ানুভূতির আমেজ খুব কমই পরিলক্ষিত হয়।
আবার এমনও হতে পারে, কোনো মুসলিম হয়তো নামাজ ও রোজা প্রভৃতি ইবাদত আদায় করে বটে; কিন্তু তার মধ্যে ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধানের প্রতি যেরূপ ঈমান থাকা প্রয়োজন, সেই ধরনের সাচ্চা ও দৃঢ় ঈমান তার মধ্যে নেই। এরূপ ব্যক্তি যদিও ঈমানের আচ্ছাদন পরিহিত; কিন্তু তার প্রায় আচার-আচরণ ও কার্যকলাপ ঈমানের পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়। সে নিরন্তর ইসলামের বহু বিধিবিধানের বিরোধিতা করে কিংবা এগুলোকে অবজ্ঞা করে চলে।