আমরা আলিমগণের ইলমের দৈন্যদশা বনাম

আমরা আলিমগণের ইলমের দৈন্যদশা বনাম শ্রেষ্ঠত্বের অভিমান 

লেখক: ড. আহমদ আলী 

• ‘‘যে ব্যক্তি নিজেকে আলিম বলে দাবি করবে, সে প্রকৃতই জাহিল (মূর্খ)।”–সাইয়িদুনা উমার রা.

• ‘‘তুমি কিছুই জানো না_এটা জানা-ই জ্ঞানের আসল মানে।”-সক্রেটিস

যেসব কারণে একটি কমিউনিটিতে অশান্তি ও বিভেদ সৃষ্টি হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 

প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মনে করা, আত্মগুণাভিমান। এটি অত্যন্ত নিকৃষ্টতম ও ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি। 

বস্তুত এ শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্যবোধের কারণেই সমাজের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মানামানি উঠে যায়। 

একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. তিনটি ধ্বংসাত্মক বিষয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,

وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ، وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ 

“(একটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হলো,) নিজেকে নিজে বুযুর্গ ও শ্রেষ্ঠ মনে করা। এটা সর্বাপেক্ষা জঘন্য।” –বাইহাকী 

অত্যন্ত পরিতাপের ব্যাপার হলো, এ মারাত্মক ব্যাধিটি এখন আমাদের আলিমদের ব্যাপকভাবে গ্রাস করেছে। 

উল্লেখ্য, আমরা আলিমগণের ইলমের যে দৈন্যদশা- তা বর্তমানে ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। 

এতদসত্ত্বেও আমাদের একটি সাধারণ চরিত্র হলো,

আমাদের অনেকেই কথার্বাতায় ও বেশভূষায় নিজেদের শ্রেষ্ঠ আলিম ও ফকীহ-মুফতী হিসেবে জাহির করতে পছন্দ করেন এবং অন্য আলিমদের জ্ঞানের স্বীকৃতি দিতে রাজি হন না; বরং তাদের তুচ্ছ করে উপহাস করেন। 

ইলমের এরূপ অহমিকা ও আত্মতুষ্টি একটি অতীব ঘৃণ্য চরিত্র। 

এটি একজন আলিমকে চরম অহংকারী ও অসহিষ্ণুতে পরিণত করে, 

অপরদিকে তাঁদের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন বৃদ্ধি করে। 

এর পরিণতিও ভয়াবহ। 

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- 

“… অতঃপর এমন কিছু লোকদের উদ্ভব ঘটবে, যারা কুরআন পড়বে, কুরআনের জ্ঞান লাভ করবে। 

তারা এভাবে দম্ভোক্তি করবে যে, আমাদের চেয়ে বড়ো কারী কে আছে? আমাদের চেয়ে বড়ো ফকীহ আর কে আছে? কে আছে আমাদের চেয়ে বড়ো আলিম?! 

রাসূল সা. সাহাবীগণ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,

‘এ জাতীয় লোকদের মধ্যে কি কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে?’ 

তাঁরা জবাব দিলেন, 

‘না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কারা এসব লোক?’ 

তিনি জবাব দিলেন, 

‘তারা এ উম্মতের মধ্যে তোমাদের মধ্য থেকেই জন্ম নেবে। এসব লোক হলো জাহান্নামের ইন্ধন।’” –তাবারানী

সাইয়িদুনা উমার রা. বলেন- 

“আমি তোমাদের বেলায় যে বিষয়ের ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা আশঙ্কা বোধ করছি, তা হলো- ব্যক্তির নিজের চিন্তা ও রায়ের ওপর আত্মতুষ্টি। 

(মনে রেখো,) যে ব্যক্তি নিজেকে আলিম বলে দাবি করবে, সে প্রকৃতই জাহিল (মূর্খ)।”

– ইবনু হাজার, আল মাতালিবুল আলিয়াহ

(আলিম সমাজের ঐক্য- বই থেকে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart
error: Content is protected !!